আমতলী প্রতিনিধি ॥ বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের মালীপাড়া গ্রামের মৃত্যু হাতেম হাওলাদারের স্ত্রী রিজিয়া বেগম। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী রিজিয়ার বর্তমান বয়স ৮১ বছর ৫ মাস। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত তার কপালে জোটেনি কোনো সরকারি ভাতা বা সাহায্য। বৃদ্ধ রিজিয়া প্রশ্ন আর কত বছর বয়স হলে তিনি ভাতা পাবেন। গত ১৪ বছর পূর্বে স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে হাবিল হাওলাদারের সংসারে থাকতেন রিজিয়া বেগম। তিন ছেলের মধ্যে গত বছর হাবিল হাওলাদার মারা যাওয়ার পর অভাবের সংসারে টানাপড়েনে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তার। অন্য দুই ছেলে মাইন উদ্দীন ও শহিদুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে তাদের সংসার চালায়। বয়সের ভারে লাঠি ভর দিয়ে মোটামুটি হাঁটাচলা করতে পারেন রিজিয়া বেগম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে রোগে বাসা বাঁধছে। দুই হাতের আঙ্গুলগুলোও বাঁকা হয়ে গেছে। যার কারণে খাবার-দাবারও তিনি হাত দিয়ে খেতে পারে না। বড় ছেলে হাবিল মারা যাওয়ার পরে সংসারের হাল ধরতে পুত্রবধূ জেসমিন বেগম। বাড়ির পাশে একটি চা- বিস্কুটের দোকান দেয়। ওই দোকানেই সবসময় বসে থাকেন বৃদ্ধ রিজিয়া। এই দোকানের আয় দিয়েই কোনো রকমের সংসার চালালেও মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দোকান বন্ধ। এখন অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। অথচ এই বয়সে এসেও তার কপালে একটি বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড জোটেনি। বৃদ্ধ রিজিয়া বেগম আক্ষেপ করে বলেন, আগে বাড়িতে বসে কাম-কাজ করে চলতে পারতাম, এখন পারি না। শরীরে বল শক্তি পাই না, হাতের আঙ্গুলগুলোও বাকা হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, বিধবা ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডিসহ অসহায় মানুষের জন্য দেওয়া সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা আমি পাই না। বারবার সাহায্য চেয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তারা আমাকে একটি ভাতার কার্ড করে দেয় নাই। “আল্লার কাছে বিচার দিছি, যদি কারো দয়া হয়।” বড়বগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন আলম মুন্সী বলেন, রিজিয়ার মত এমন অনেক বৃদ্ধা নারী আছে যারা বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এলাকার মেম্বারদের স্বজনপ্রীতির কারণে এসব অসহায় মানুষরা সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। ভাতা দেওয়ার কাজ শুরু হলে বিষয়টি আমি দেখবো। তালতলী সমাজসেবা কর্মকর্তা শফিকুল আলম বলেন, বর্তমানে বিধবা ও বয়স্ক ভাতা নেওয়া হচ্ছে না। বৃদ্ধা রিজিয়া বেগমের আইডি কার্ড আমার অফিসে জমা দিয়ে গেলে পরবর্তীতে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার নাম নেওয়া শুরু হলে তার আইডি কার্ড দেখে যাচাই পূর্বক তার নাম ভাতায় অর্ন্তভূক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কায়সার হোসেন বলেন, বৃদ্ধ রিজিয়া বেগমের খোঁজ-খবর নিয়ে তার জন্য ভাতার কার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply